★★★ভোর ৬ টা ২২ মিনিট। হঠাৎ মোবাইলে
মেসেজের শব্দ । শীতের সকাল। সজাগ
থাকলেও মোবাইলটা ধরতে ইচ্ছে করছিলো
না। তারপরও হাতে নিলাম একটু জায়গা থেকে
সরে। অপরিচিত নাম্বার মনে হচ্ছে । যাই হোক
মেসেজটা ওপেন করলাম। পড়লাম, যা পড়তে
সময় লাগছে ২ মিনিটের মত। বুঝেনইতো ২ মি.
কম সময় না। ইয়া লম্বা মেসেজ। যাই হোক
সংক্ষেপে বলি। যাতে লেখা ছিলো "আমি
বাড়ি থেকে বাহির হয়ে গেছি সাথে আছে
কিছু কাপড় আর সামান্য কিছু টাকা, তুমি যা
পারো নিয়ে এসো। আর আমার ষ্টেশনে
পৌঁছতে সময় বেশি লাগবে না। আমার
মোবাইলটা ভাবির রোমে তাই মা'রটা নিয়ে
চলে আসছি। তুমি এইটাতেই কল দিও। বেলেনস
নাই তাই মেসেজ দিলাম"।
মেসেজটা দেখেই বসে পড়লাম। কে সে?
কাকেই বা মেসেজ দিতে গিয়ে আমাকে
দিলো। ২ মিনিট বসে ভাবলাম। কি করবো
বুঝতে পারছি না। মেসেজে ষ্টেশনের নাম আর
ট্রেনের সময় ও সিট নাম্বার সহ লিখে
দিয়েছে। কি করি আমি? ভাবলাম ওনাকে কি
ফোন করে ব্যাপারটা বলে দিবো না কি
নিজেই যাবো। আর যাকে মেসেজ করেছে সে
যদি না আসে তাহলেতো বেচারির সব শেষ।
ওঠেই পড়লাম। তাড়াহুরো করে রেডি হলাম।
মানি ব্যাগে ৭৫০০ টাকা ছিলো। মা'র লকার
খুলে আরো ১০০০০ পেলাম। যাই হোক যতটুকু
করা যায়। মটরসাইকেলের চাবিটা হাতে
নিলাম। না চাবি রেখে দিলাম মটরসাইকেল
নিবো না। আর ষ্টেশনও তেমন দূরেনা।
বেরিয়ে পড়লাম এই কনকনে শীতে। সাথে
আছে অনেক উত্তরের বাতাস। ষ্টেশনে
পৌঁছালাম। মেসেজের দেয়া ট্রেনের সময়ও
নিকটেই। চারদিকে তাকালাম মানুষ জন আছে
কিন্তু এর মধ্যে কোন মেয়েকে দেখছি না।
তাহলে কি সে আসেনাই নাকি কেউ মজা
করছে আমার সাথে। এদিকে ঠান্ডায় আমার
হাত পা চলছে না। ১৫ মিনিট হয়ে গেলো কোন
কাউকে দেখছি না। ভাবলাম কল দেই দেখি
কোথায় আছে। না কল দিলে হয়তো আমার কন্ঠ
ছিনে ফেলবে। তখনই দেখলাম মেসেজের
আওয়াজ। ওর ই মেসেজ। লিখেছে " শোন আমি
সামনের ষ্টেশনে চলে আসছি তুমি সেখানে
এসো কেন এসেছি তা পরে বলবো, রাখি বাই"।
তারা হুরো করে একটা সিএনজি নিয়ে
সামনের ষ্টেশনে গেলাম। এর মধ্যে ট্রেনও
সেখানে গিয়ে পৌঁছলো। সবাই উঠে গেছে
এখনি ছাড়বে। কিন্তু সে কোথায় কি করেই বা
তাকে আমি ছিনবো? ট্রেন চলছে আমিও
হাটছি। পরে হঠাৎ করে মেসেজে দেওয়া সিট
নাম্বারের কথা মনে পড়লো। দৌড়িয়ে গিয়ে
সেই বগিতে উঠলাম। সিটের পাশে গিয়ে
দেখি ভোরের মিটি মিটি অন্ধকারে
জোৎসনার আলোর মতই সুন্দর একখানা মেয়ে
হাতে ব্যগ নিয়ে কালো চাদর মাথায় দিয়ে
বসে বসে কাঁদছে।
জিগেস করলাম এইযে শুনুন, বলতেই তাকালো।
চোখের কালো মনিটা দেখা যায় না। জলে
ভরে আছে দুচোখ। জিগেস করলাম মেসেজ
দিয়ে ছিলেন? একথা বলতেই জড়িয়ে দরলো।
বলতে লাগলো আমি ভেবেছিলাম তুমি
আসবেনা। আর আমিতো শীতে কাঁপছিলাম।
আমার কাঁপা দেখে সিটে বসিয়ে ওর গায়ের
চাদরের একটা অংশ দিয়ে আমাকে ঢেকে
ফেললো। ভেবেছিলাম তাকে সব কিছু খুলে
বলবো। কিন্তু তার এতো ভালবাসা দেখে
তাকে যে আর কিছুই বলতে পারলাম না।
চাদরের ভিতরই তাকে জড়িয়ে দরলাম। ও
বলতে লাগলো তুমিতো বলেছিলে তুমি কালো
কিন্তু তুমিতো অনেক সুন্দর। আমার সাথে
দুষ্টমি হয়েছিলো না তা বলেই মার দেয়া শুরু
করলো।
আর সেখান থেকেই আমরা চট্টগ্রাম চলে যাই।
আর সেখানে গিয়ে আমরা বিয়ে করি। ছোট
একটা চাকরি নেই সাথে ছোট একটি বাসা।
আজ আমাদের কোল জুড়ে আছে আমাদের
মেয়ে মিথিলা। অনেক সুখেই আছি।
কিন্তু আজো বলতে পারিনাই তাকে যে আমি
সেই ছেলে নই যাকে সে মেসেজ দিয়েছে। শুধু
মাত্র তাকে হারানোর ভয়ে। ভিষন ভালবাসি
ওকে..........ভিষন।
Comments
Post a Comment