-- মামা একটু তাড়াতাড়ি চালান। এত আস্তে চালালে তো
আজকে রাত শেষ হয়ে যাবে বাসায় যেতে
যেতে।
কে শোনে কার কথা? বলার পরও রিকশাওয়ালার কোন
বিকার নেই। তিনি তার আপন গতিতেই রিক্সা চালাচ্ছেন।
আর এদিকে আমি যতই বাসার দিকে এগুচ্ছি ততই বুকটা
ধুকপুক করছে। কোন সন্দেহ ছাড়াই আজকে বাসায়
তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবে।
আমাকে আমার আদরের বউ তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে
বলেছিল আজ। তাড়াতাড়ি মানে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে
ঘরে প্রবেশের হুকুম। কিন্তু এখন রাত সাড়ে নয়টা।
মনে মনে অফিসের বসের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করলাম।
বসকে এত করে বলার পরও বস আমাকে কিছুতেই
ছাড়লেন না!
অবশেষে বাসায় এসে পৌছুলাম। বুকের ভেতর
থেকে হাপরের মত শব্দ হচ্ছে।
কাঁপাকাঁপা হাতে কলিংবেলে চাপ দিলাম।
একবার, দুইবার, তিনবার। খটাং করে দরজা খুলে গেল।
উনার চেহারার দিকে তাকালাম। চেহারা থমথমে হয়ে
আছে। ঝড় উঠার পূর্ব লক্ষন।
-- মানে হয়েছে কি আজ বস আমাকে ছাড়লোই না।
কতো করে...................
মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। তানিয়া মানে আমার বউ
আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যে আমার পা
থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে উঠলো।
-- ইয়ে তানিয়া এমন ভাবে তাকাচ্ছো কেন? ভয়
লাগেতো।
-- ( উনি নিরব)
-- আসলে আমি ইচ্ছে করে এত দেরি করিনি। বস
আসতে দিচ্ছিলো না। সব কাজ শেষ করিয়ে তারপর
ছাড়লো।
-- ( এখনো নিশ্চুপ)
-- কি ব্যাপার তুমি কি মৌনব্রত পালন করছো নাকি?
-- আমার চেয়ে কি তোমার চাকরিটাই তোমার কাছে
বড় মনে হলো?
যাক বাবা কথা বলেছে অন্তত।
-- কখনোই না। আগে আমার বউ তারপর আমার চাকরি।
-- তুমি আর একটা কথাও বলবে না। তোমার চাকরিই
তোমার কাছে বড় হয়ে গেল। আমার কোন দাম
নেই তাইনা?
-- কি বলছো এসব? তুমি জানোনা আমি তোমাকে কত
ভালবাসি? শুধুমাত্র বসের কারনেই আজ দেরি হয়ে
গেল।
-- বুঝি সবই বুঝি। আমি পুরোনো হয়ে গেছি তাই আর
আমাকে এখন ভাল লাগেনা।
-- দেখো তানিয়া এবার কিন্তু তোমার খবর আছে
আরেকটা উল্টাপল্টা কথা বললে।
-- বলবো, একশোবার বলবো। কি করবে তুমি
আমায়?
-- উম্মাহ।
-- এই এটা কি করলা?
-- একটু মিষ্টি খেলাম। তুমি তো জানোই অফিস
থেকে এসে মিষ্টি না খেলে আমার ক্ষুদা লাগেনা।
-- উহ অফিস থেকে দেরি করে এসে মিষ্টি খাওয়া
হচ্ছে? তোমার সাথে কথা নাই।
-- সত্যি কথা নেই?
-- না নেই।
-- সত্যিই নেই?
-- বললাম না নেই।
-- সত্যিই নেই তো?
-- দেখো আমাকে হাসানোর চেষ্টা করে লাভ
নেই। আমি হাসবো না।
-- হাসবে না তো? ঠিক আছে একটু সুড়সুড়ি দিয়ে
দেখি আমার বাবুনিটা হাসে কিনা।
-- এই ভুলেও আমার কাছে আসবে না।
-- নাহ আসবোই।
-- বললাম না আসবে না।
-- না আমি আসবোই। পারলে আটকাও।
-- কাছে আসলে কিন্তু....
-- (জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে) কাছে আসলে কি
করবে? এইতো তোমার কাছে এসে গেছি।
-- দেখো ছাড়ো আমায়। সারাদিন আমার কথা মনে
ছিলোনা। এখন আসছে পিরিত দেখাতে।
-- আমার পাগলী বউটার কথা আমার সারাক্ষন মনে
পড়ে। মনে চায় সারাদিন আমার বাবুনিটাকে আদর
করতে।
-- তাহলে তোমাকে মানা করেছে কে?
-- ঠিক আছে তাহলে কালকে থেকে আর যাবোনা
অফিসে। শুধুই ঘরে বসে মিষ্টি খাবো।
-- হুহ তোমাকে মিষ্টি দিলে তো!
-- আমি মিষ্টি জোর করে খেতে পারি।
-- পারলে খেয়ে দেখাও দেখি।
-- তা খাবো। কিন্তু এখন যে আমার ক্ষুদা লেগেছে।
শুধু মিষ্টি খেলে তো পেট ভরবে না।
-- তাহলে আমাকে এখন ছাড়ো?
-- কেন ছাড়বো?
-- না ছাড়লে আমি তোমাকে খাবার দিব কিভাবে?
-- ও আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম।
-- মনে রেখো আজ দেরি করে আসার শাস্তি কিন্তু
এখনো পাওনি। শাস্তিটা জমা করে রাখলাম।
-- ওরে বাবাহ শাস্তি মাফ হয়নি?
-- নাহ হয়নি। পরে সুদে আসলে শাস্তি দিব।
-- খাইছেরে।
..
এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের অভিমান ও ভালবাসার
খেলা। আমি দেরি করে আসবো আর তানিয়ার রাগ
ভাঙ্গাবো। তবেই না আমাদের ভালবাসা আরো
গভীর হবে।
Comments
Post a Comment